ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নারীর স্বাধীনতা

প্রান্তিক নারী জীবন

বাঁধের পাড়ের সোনা বরুর সোনার জীবন!

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২০
বাঁধের পাড়ের সোনা বরুর সোনার জীবন! শীতে জবুথবু সোনা বরুর। ছবি: বাংলানিউজ

বিহঙ্গদ্বীপ সংলগ্ন রুহিতার বাঁধ থেকে: বয়স একশ বছর ছুঁইছুঁই, চেহারার দিকে তাকালেই বোঝা যাবে বয়স আর জীবনযাপনের হাল। স্বামী মারা গেছেন দেশ স্বাধীনের আগে। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে সংসার। অতি কষ্টে জীবনযাপন করছেন। অনেক স্বপ্ন নিয়ে মেয়ের হাসিমুখ দেখতে বিয়ে দিলেও বছরের মাথায় তালাক হয়ে যায়। মেয়েও বৃদ্ধ মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের সুখ বিলিন করে দ্বিতীয় বিয়ে করেননি হাজেরা বেগমের। মাকে নিয়েই থাকেন বাঁধের পাশে সরকারি জমিতে কুঁড়ে ঘর বেঁধে।

কনকনে শীতে জবুথবু আর বৃষ্টির দিনে কুঁড়ে ঘরের চালের পানিতে সোনা বরুর বসবাস। সোনা বরু ও মেয়ে হাজেরা বেগমের দিন চলে কোনো রকম।

বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে গেছে সোনা বরু, মেয়ে হাজেরা নদীর পাড়ে মাছ ধরে যা পায় তা দিয়ে কোন রকম দিনযাপন করছেন মা-মেয়ে। শতবর্ষী সোনা বরু কয়েক মাস আগে পড়ে গিয়ে ডান পা ভেঙে যাওয়ায় মেয়ের সাহায্য নিয়েই চলতে হয় এখন। ঘরে সোনা বরুর।  ছবি: বাংলানিউজরুহিতা গ্রামের সোনা বরুর মতো অনেকেই এরকমের অসহায় দিনযাপন করছে। শতবর্ষী সোনা বরুর সঙ্গে তখন কথা হয়, দেখা যায় কনকনে শীতে কুঁড়ে ঘরে কোনো রকম একটি পাতলা কম্বল গায়ে দিয়ে বসে আছেন। এ বয়সে চোখে কম দেখা আর কানে কম সোনা স্বাভাবিক বিষয়, কিন্তু সোনা বরু ঠিক তার উল্টো। দেখামাত্র চিনতে পেরেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঠিক পাইছি, আমি চোখেও কম দেখিনা কানেও কম শুনিনা।

বৃদ্ধ বয়সে সংসার জীবন কেমন চলছে জানতে চাইলে সোনা বরু বলেন, স্বামী মারা গেছে হিরিকের (স্বাধীনতা যুদ্ধে) সময়। হেরপর থেকে মাইয়াডা নিয়া থাহি। সংসার কিভাবে চলছে জানতে চাইলে বলেন, মাইয়াডায় কাম হইরা আনে হেইয়া দিয়া চলে সংসার। আর মাইনসে মাঝে মাঝে চাইল-ডাইল দেয়।

তিনি আরও বলেন, মাইয়াডারে বিয়া দিছি বছরের মাথায় তালাক দিয়া গ্যাছে। মোর মোহের দিকে তাকাইয়া মাইয়ার সুখ হয় নাই।

প্রতিবেশী মো. রফিক বলেন, সোনা বরু খুবই অসহায়। আমরা মাঝে মাঝে তাদের সহযোগিতা করি। মা-মেয়ে খুবই অসহায় আছে।

পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. খলিলুর রহমান বলেন, ওই মা-মেয়েকে আমরা মাঝে মধ্যে চাল-ডালসহ বিভিন্ন কিছু দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২০
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।